মায়াপুর ও নবদ্বীপ ক্যাম্প
মায়াপুর ও নবদ্বীপ ধামে ভ্রমণের অনেক আধ্যাত্মিক, মানসিক এবং শারীরিক উপকারিতা রয়েছে। এই স্থানগুলো হিন্দু ধর্মের বিশেষত বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এবং তা ভক্তি ও আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। ভ্রমণের উপকারিতাগুলো নিম্নরূপ:
### ১. **আধ্যাত্মিক উন্নতি**
– মায়াপুর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান, যিনি বৈষ্ণব ধর্মের মহান প্রচারক। এখানে ভ্রমণ করলে ভক্তরা চৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা এবং ভক্তি আন্দোলনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন।
– নবদ্বীপ এবং মায়াপুর ধামে ভজন, কীর্তন ও নামসংকীর্তন শুনে আধ্যাত্মিক শক্তি ও শান্তি লাভ করা যায়।
### ২. **মনের শান্তি ও মানসিক স্বস্তি**
– এই পবিত্র স্থানগুলোতে পরিবেশ অত্যন্ত শান্ত এবং নির্মল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গঙ্গার আশেপাশে সময় কাটানো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
– ধামে ভ্রমণ আত্ম-অন্বেষণ এবং নিজের অন্তর্গত শান্তি খুঁজে পাওয়ার একটি সুযোগ দেয়।
### ৩. **সামাজিক সংযোগ**
– বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভক্তদের সাথে পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে নতুন সম্পর্ক ও সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়।
– একই সময়ে, ধর্মীয় দীক্ষা ও শিক্ষা ভাগাভাগি করার সুযোগ পাওয়া যায়।
### ৪. **ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন**
– মায়াপুর ও নবদ্বীপে অনেক মন্দির, আশ্রম এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে শাস্ত্র ও ধর্মীয় কাহিনি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান লাভ করা যায়।
– শ্রীমদ্ভাগবত ও গীতার পাঠের মাধ্যমে ধর্মীয় ও জীবনদর্শনের নতুন দিক উপলব্ধি হয়।
### ৫. **শারীরিক উপকারিতা**
– গঙ্গা নদীর পবিত্র জলে স্নান করা শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি শরীরকে সতেজ করে এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে।
– মন্দির ও আশ্রম দর্শনের জন্য হাঁটার মাধ্যমে শরীরের সুস্থতা বজায় থাকে।
### ৬. **পরিবেশের সৌন্দর্য উপভোগ**
– মায়াপুর ও নবদ্বীপ গঙ্গার তীরে অবস্থিত, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।
– গ্রামীণ পরিবেশ ও শান্ত প্রকৃতি থেকে নগর জীবনের কোলাহল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
### উপসংহার
মায়াপুর ও নবদ্বীপ ধামে ভ্রমণ শুধু একটি ধর্মীয় সফর নয়, এটি একটি মানসিক এবং আধ্যাত্মিক পুনর্জন্মের সুযোগ। এই স্থানগুলোতে ভ্রমণ জীবনের গভীর অর্থ উপলব্ধি করতে সাহায্য করে এবং ভক্তি ও বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে।
রাস পূর্ণিমা
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে আছে কার্তিকী পূর্ণিমাতিথি, যাকে আমরা রাসযাত্রা বা রাসলীলামহোৎসব বলেও অবিহিত করি।রাস শব্দের অর্থ ধ্বনি, শব্দ,বাক্য, কোলাহল, বিলাস, ক্রীড়া এবং অনেকের সাথে একসাথে আনন্দঘন নৃত্যবিশেষ।ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনী প্রধানত শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণেই বর্ণিত, অবশ্য আরো বেশকিছু পুরাণেও তাঁর পুরুষোত্তম রূপে নরলীলা বর্ণনা করা আছে। এ শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধের ২৯-৩৩ এ পাঁচটি অধ্যায়কে রাসপঞ্চাধ্যায়ী বলে। রাসলীলার পক্ষে বিপক্ষে বহু কথা প্রচলিত। এ সকল কথা ছাপিয়ে রাসলীলা হলো ভক্ত এবং ভগবানের মিলনের তিথি। অন্ধকার হৃদয়ে যখন জ্ঞান এবং ভক্তির আলোক এসে পরমাত্মার সাথে সংযোগ স্থাপন করে হৃদয়কে আলোকদীপ্ত করে তোলে তখনই তাকে রাস বলে। লালনের ভাষায় :
“অমাবস্যার পূর্ণিমা হয়
মহাযোগ সেই দিনে উদয়
লালন বলে, তার সময়
দণ্ডে করএ না।
সময় গেলে সাধন হবে না।”
রাসলীলা কামের প্রবর্তনের জন্যে নয় কামের নিবর্তনই এর প্রধান উদ্দেশ্য। কাম থেকে কামাতীত হওয়া।গোপীদের হৃদয় ছিলো কামনাহীন নিষ্কাম প্রেমদ্বারা পূর্ণ। তাইতো শ্রীমদ্ভাগবতে খুব সুন্দর একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টিকে বোঝানো হয়েছে।
ন ময্যাবেশিতধিয়াং কামঃ কামায় কল্পতে।
ভর্জিতা ক্বথিতা ধানা প্রায়ো বীজায় নেষ্যতে।।
(শ্রীমদ্ভাগবত: ১০.২২.২৬)
“আগুনে ভাজা বীজে যেমন অঙ্কুরোদয় হয় না, ঠিক একই ভাবে যাদের চিত্ত শ্রীভগবানের প্রতি আবিষ্ট তাদের কামনা সাংসারিক বিষয়ভোগে কখনই পরিণত হয় না”
এ বিষয়ে শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধের উনত্রিশ অধ্যায়ের রাসলীলার শুরুতেই বলা আছে অসাধারণ কিছু কথা।
উক্তং পুরস্তাদেতত্তে চৈদ্যঃ সিদ্ধিং যথা গতঃ।
দ্বিষন্নপি হৃষীকেশং কিমুতাধােক্ষজপ্রিয়াঃ।।
নৃণাং নিঃশ্রেয়সার্থায় ব্যক্তির্ভগবতাে নৃপ। অব্যয়স্যাপ্রমেয়স্য নির্গুণস্য গুণাত্মনঃ।।
কামং ক্রোধং ভয়ং স্নেহমৈক্যং সৌহৃদমেব চ।
নিত্যং হরৌ বিদধতাে যান্তি তন্ময়তাং হি তে৷৷
(শ্রীমদ্ভাগবত: ১০.২৯.১৩-১৫)
“ভগবান অব্যয়, অপ্রমেয়, নির্গুণ এবং সকল গুণের নিয়ন্তা; তাঁর অবতাররূপে দেহধারণ অন্য মানবের মত নয়। জগতের মঙ্গলের জন্যেই তাঁর আবির্ভাব। গোপীদের প্রেমই হোক, শিশুপাল প্রভৃতির ক্রোধই হোক, কংস প্রভৃতির ভয়ই হোক, নন্দ প্রভৃতির স্নেহই হোক, ভক্তের ভক্তিই হোক, তত্বজ্ঞানীর শ্রদ্ধাই হোক আর যুধিষ্ঠির প্রভৃতির সম্বন্ধই হোক – যে কোন প্রকারে ভগবানে আসক্তি জন্মালে তাই মুক্তির কারণ হয়। ভগবানের প্রতি প্রেম, ক্রোধ, ভয়, স্নেহ, ভক্তির যে কোন একটির দ্বারাই তাঁর কৃপা লাভ করে মুক্তিলাভ করা সম্ভব।”
আপনারা উপরের এই কথাগুলো ভাল করে পড়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করবেন। দেখবেন নিজেই নিজের সমাধান পাবেন। বর্তমানে আমাদের একটা বড় সমস্যা হলো যে আমরা কিছু তথাকথিত শিক্ষিত মানুষেরা আমাদের ধর্মগ্রন্থগুলোকে মরুভূমিবাসী আরবীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিশ্লেষণ করতে শুরু করেছি। যে ভাষায় ব্রহ্মচর্য শব্দকে অনুবাদ করা যায় না, তারা কি করে বুঝবে দেহ থেকে দেহাতীত হবার কথা ; কাম থাকে কামাতীত হবার কথা! বিষয়টি তাদের ধারণারই বাইরে! আত্মতত্ত্বই জীবকে স্রষ্টার সাথে মিলিত করে মুক্তির পথে নিয়ে যায়।এ প্রসঙ্গে লালন সাঁই বলেছেন:
“আত্মতত্ত্ব যে জেনেছে
দিব্যজ্ঞানী সে হয়েছে।”
শ্রীকৃষ্ণের প্রতি কাম বাসনার দ্বারা চালিত বা আকৃষ্ট হলেও তিনি জড় কলুষ থেকে মুক্ত হন, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছেন ‘কুব্জা’। কাম বাসনা নিয়েই তিনি শ্রীকৃষ্ণের নিকট গমন করেছিলেন, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের চরণের সুগন্ধ আঘ্রাণ করেই তিনি কাম বাসনা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। ভগবানের কাছে স্ত্রী এবং পুরুষের কোন ভেদাভেদ নেই, কেননা প্রতিটি জীবের মধ্যেই তিনি বিরাজমান। প্রকৃতপক্ষে, পরমেশ্বর ভগবান জগতে একমাত্র পুরুষ বা ভোক্তা; আর সকলই প্রকৃতি। শুদ্ধ যোগের মধ্যেই ভগবানকে পাওয়া যায়। শ্রীকৃষ্ণদাস কবিরাজ তাঁর শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থে বলেছেন:
“কাম, প্রেম-দোহাকার বিভিন্ন লক্ষণ ।
লৌহ আর হেম যৈছে স্বরূপে বিলক্ষণ ॥”
লোহা এবং স্বর্ণে যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনই জাগতিক কাম বাসনা এবং গোপীদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলাও সম্পূর্ণভাবে আলাদা। এ রাসলীলা বা প্রেমলীলার সাথে বর্তমানকালের জাগতিক কাম এবং কামোদ্ভূত বাসনার আপাত সাদৃশ্য থাকলেও ; প্রকৃতপক্ষে তারা সম্পূর্ণরূপে আলাদা। জাগতিক প্রেম এবং অধ্যাত্ম নিষ্পাপ প্রেমের মধ্যে আকাশ-পাতল পার্থক্য। শ্রীকৃষ্ণদাস কবিরাজের মতে, নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির বাসনাকে বলা হয় কাম; পক্ষান্তরে ভগবানের প্রতি ইন্দ্রিয়ের প্রীতির ইচ্ছাকে বলা হয় প্রেম।
“আত্মেন্দ্রিয় প্রীতিবাঞ্চা – তারে বলি, ‘কাম’।
কৃষ্ণেন্দ্রিয় প্রীতি-ইচ্ছা ধরে ‘প্রেম’ নাম ॥”
বর্তমান সময়ের আমরা হয়ত অনেকেই জানিনা রাসলীলার সময়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বয়স ছিলো সাত বছর দুই মাস। তাইতো আমরা একবিংশ শতাব্দীর চশমা দিয়ে ৫২০০ বছর আগের সেই সময়কে দেখার বৃথাই চেষ্টা করে যাচ্ছি। তার ফলাফল যা হবার তাই হচ্ছে! যদি রাসলীলার প্রধান উদ্দেশ্য কামের প্রবর্তনই হত, তবে এই রাসলীলা শ্রবণে বা প্রচারের ফলে ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত হওয়ার কথা শ্রীমদ্ভাগবতেই অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকত না।
বিক্রীড়িতং ব্রজবধূভিরিদং চ বিষ্ণোঃ
শ্রদ্ধান্বিতােহনুশৃণুয়াদথ বর্ণয়েদ্ যঃ।
ভক্তিং পরাং ভগবতি প্রতিলভ্য কামং
হৃদ্রোগমাশ্বপহিনােত্যচিরেণ ধীরঃ ৷৷
(শ্রীমদ্ভাগবত:১০.৩৩.৪০)
” হে পরীক্ষিৎ, ব্রজবধূগণের সঙ্গে ভগবানের এই চিন্ময় রাসবিলাস যে ধীর ব্যক্তি শ্রদ্ধার সঙ্গে বার বার শ্রবণ এবং বর্ণনা করেন, তিনি শ্রীভগবানের চরণে পরাভক্তি লাভ করেন এবং অতি শীঘ্রই হৃদয়ের রােগস্বরূপ কামকে দূরীকৃত করতে সমর্থ হন, চিরতরে কামনা-বাসনার বন্ধন থেকে মুক্তিলাভ করেন৷”
রাসনৃত্য যে কতো স্বর্গীয় মনোগ্রাহী হতে পারে তার বাস্তব উদাহরন মণীপুরী মহারাস নৃত্য। ষোড়শ শতাব্দীতে মণীপুরের রাজা মহারাজ ভাগ্যসিংহ প্রবর্তিত ধ্রুপদী ভারতীয় নৃত্যের অন্যতম এ নৃত্যকলা বাংলাদেশ সহ ভারতবর্ষের অন্যতম শিল্পসম্পদ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই এ নৃত্যকলাকে বৈশ্বিক পর্যায়ে নিয়ে যান। ভারতের মণীপুর প্রদেশ এবং বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটের মণীপুরী সম্প্রদায়ের প্রত্যেকটি মানুষই এ রাসতত্ত্ব এবং নৃত্যদ্বারা প্রভাবিত।তবে এটাও সত্য যে গোপী প্রেমের কথা, রাধাপ্রেমের কথা বলে বলে অনেক ভণ্ড গুরুরাই তাদের শিষ্যদের বিপথে চালিত করে নিজস্ব দৈহিক এবং অর্থনৈতিক ফায়দা লুটে যাচ্ছে । এ কারণেই স্বামী বিবেকানন্দ আমাদের অধিকারী না হয়ে গোপীদের ন্যায় রাগানুগা ভক্তির চর্চা করতে নিষেধ করেছেন।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের মাঝে অবতার রূপে প্রকট ছিলেন ১২৫ বছর। প্রায় নয় বা সাড়ে নয় বছরের দিকে তিনি বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় চলে যান, আর কখনই তিনি বৃন্দাবনে আসেননি। কিন্তু আমরা বিশেষ করে বাঙালি হিন্দুরা ভগবানের দিব্যলীলার ১২৫ বছরের মধ্যে প্রথম ৮/১০ বছরকে বাদ দিয়ে শেষের ১১৫ / ১১৭ বছরে ধর্মসংস্থাপন রূপের দিকে কোন দৃষ্টি বা অনুসরণ না করে আমরা সবাই তাঁর সেই অপ্রাকৃত লীলার অনুকরণে, অনুসরণে জাগতিক নারীপুরুষ সম্পর্ক নিয়েই ব্যস্ত! বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রসঙ্গ আসলেই অনেক বিকৃতবুদ্ধির সমালোচকরা তাঁর রাসলীলা এবং তাঁর ষোল হাজার স্ত্রী প্রসঙ্গ নিয়ে আসেন। রাসলীলা প্রসঙ্গে আমি এই লেখাতেই পূর্বে সমালোচকদের বেশকিছু সমালোচনার উত্তর দিয়েছি। ষোলহাজার স্ত্রী প্রসঙ্গে বলতে হলে বলতে হয়, পুরাণের নিজস্ব একটা বাস্তবতা আছে, সেই বাস্তবতা যে বর্তমানের বাস্তবতার সাথে সকল কিছুতেই মিলবে এর কোন বাধ্যবাধকতা নেই। পৃথিবীর সকল দেশের, সকল জাতির পুরাণের মধ্যেই যেমন ইতিহাস আছে তেমনি কাল্পনিকতাও আছে। তাই পৌরাণিক আখ্যানগুলো আমাদের গ্রহণ বর্জনের মাধ্যমেই গ্রহণ করতে হবে।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ষোলহাজার স্ত্রী প্রসঙ্গ তেমনই একটি কল্পিত পৌরাণিক বাস্তবতা। শ্রীমদ্ভাগবতের কাহিনী অনুসারে নরকাসুর নামক আসুরিক ভাবাপন্ন এক রাজা অত্যন্ত নিম্নস্থরের ভোগী মানসিকতা থেকে তার কারাগারে সারা ভারতবর্ষ থেকে বেছে বেছে সুন্দরী কুমারী নারীদের নিয়ে এসে অবরুদ্ধ করে রেখে তাদের বিভিন্নভাবে মানসিক-শারীরিক মৃত্যুসম যন্ত্রনা দিতে থাকে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তখন সেই দুরাচারী নরকাসুরকে বধ করে তার কারাগার থেকে এই অসহায় ষোলহাজার কুমারীদের মুক্তি দেয়। তখন কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে অসহায় কুমারীরা বলে, হে কৃষ্ণ আমরা যেহেতু নরাসুরের কারাগারে বন্দী ছিলাম তাই আমাদেরকে সমাজ আর ভালভাবে গ্রহণ করবে না, তাই আমরা সকলেই তোমাকে পতিরূপে পেতে চাই। তখন সেই বাধ্যবাধকতা থেকেই শ্রীকৃষ্ণ তাদের স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেন। তবে বঙ্কিম চন্দ্র চট্টপাধ্যায় তাঁর শ্রীকৃষ্ণচরিত্র গ্রন্থে অসংখ্য যুক্তি প্রমাণ দিয়ে এই ষোলহাজার স্ত্রী মতবাদকে খণ্ডন করেছেন। আমি শুধুমাত্র এতটুকুই বলতে চাই যে, শ্রীমদ্ভাগবতকে রেফারেন্স দিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ষোলহাজার স্ত্রীর কথা বলে অনেকে যারা আরবীয় বহুবিবাহের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে। সেই শ্রীমদ্ভাগবতেই কিন্তু লেখা আছে যে তিনি যখন এই ষোলহাজার স্ত্রীকে গ্রহণ করেছেন, তখন সাথেসাথেই তিনি নিজেকে ষোলহাজার রূপে প্রকাশিত করে ফেলেন। ষোলহাজার স্ত্রী সকলেই সার্বক্ষণিক ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তাঁদের নিজ নিজ পাশে এবং গৃহে দর্শন করতেন। নিজেকে ষোলহাজার রূপে প্রকাশিত করা এটা কোন সাধারণ মানুষের কাজ নয়। । তবে জাকির নায়েকের মত অন্য ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি যারা সার্বক্ষণিক শ্রীকৃষ্ণের ষোলহাজার বিয়ে নিয়ে কটূক্তি করে, তাদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ষোলহাজার বিয়ের তথ্যের সাথে সাথে একই সাথে ষোলহাজার রূপে শ্রীকৃষ্ণের নিজেকে প্রকাশিত করার তথ্যটিও মানতে হবে। পৌরাণিক বাস্তবতা থেকে একই উৎসের একটি তথ্য মানবো,অন্যটি মানবো না এটাকে এককথায় ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।
যাঁর জন্ম হয়েছে বিভিন্ন পাপি দুরাচারীদের ধ্বংস করে ধর্ম সংস্থাপনের জন্যে, যিনি শিশুকাল থেকে ১২৫ বছর আয়ু পর্যন্ত নিরলসভাবে সারা ভারতবর্ষের সর্বত্র চষে বেড়াতে বেড়াতে শুভ শক্তির উদ্বোধনের জন্যে, বিজয়ের জন্যে একজন স্ত্রীকেও ঠিকমতো সময় দিতে পারেননি। সেই তিনিই কিনা জীবনে শতশত নারীদের সাথে প্রেমলীলা করে অলস জীবন অতিবাহিত করেছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্কে এ কথাগুলো হাস্যকর এবং অবিশ্বাস্য। শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধের রাসপঞ্চাধ্যায়ী (২৯-৩৩ অধ্যায়) থেকে রাসলীলার সময়ে গোপীদের মনোভাবের পরিচয় দিতে গিয়ে একটি শ্লোকের উল্লেখ করা হয়েছে। শ্লোকটি বিখ্যাত এবং জনপ্রিয়। এ শ্লোকটি ভাল করে পড়লে সাধারণ পাঠকমাত্রেই বুঝবেন, সে সময়ে গোপীজনেরা কোন কামাসক্ত ছিলেন না। তাঁরা ছিলেন সকল কামনা বাসনার অতীত জীবন্মুক্ত অবস্থায়। কারণ কামনাসক্ত অবস্থায় কখনোই কারো ব্রহ্মের কথা ব্রহ্মজ্ঞানের কথা মনে থাকে না; মনে-মুখে থাকে শুধুমাত্র ভোগের কথা এবং বাসনা আকাঙ্ক্ষার কথা।
তব কথামৃতং তপ্তজীবনং কবিভিরীড়িতং কল্মষাপহম্।
শ্রবণমঙ্গলং শ্রীমদাততং ভুবি গৃণন্তি তে ভূরিদা জনাঃ।।
(শ্রীমদ্ভাগবত :১০.৩১.০৯)
“হে কৃষ্ণ, সংসারে মৃত্যুগ্রস্থ, হতাশ, তাপক্লিষ্ট ব্যক্তিদিগের জীবনপ্রদ, ব্রহ্মজ্ঞ পরমজ্ঞানীদের আরাধিত, সর্বপাপনাশক, শ্রবণমাত্রেই মঙ্গলপ্রদ, সর্বশক্তি সমন্বিত সর্বব্যাপক তোমার কথামৃত যারা সবার মাঝে প্রচার করেন ; আমাদের মতে পূর্ব পূর্ব জন্মের সুকৃতি এবং বর্তমান কর্মফলে তাঁরাই এ জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা রূপে সম্মানিত হন।”
রাসলীলা আরম্ভে শ্রীকৃষ্ণ বংশীধ্বনি করলেন । ঐ ধ্বনি ৮৪ ক্রোশব্যাপি ব্রজমণ্ডলকে পরিব্যাপ্ত করল। সে মধুর বংশীধ্বনি শুনে মুক্তিকামী ব্রজাঙ্গনারা আকৃষ্ট হয়ে ছুটে এলেন।”জগৌ কলং বামদৃশাং মনোহরম্ (ভাগবত: ১০.২৯.৩)”।ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অচিন্ত্য মাধুর্য, ঐশ্বর্য ও বীর্যশক্তির প্রভাবে একমাত্র ভক্তিস্নাত গোপাঙ্গনারাই কেবল সেই অচিন্ত্য মধুর বংশীধ্বনি শুনতে পেয়েছিলেন।বাঙালি হিন্দু সমাজকে নপুংসক এবং কাপুরুষ বানানোর জন্য তত্ত্ব উপলব্ধি বিহীন রাসলীলাচর্চা অনেকটা দায়ি।এসব তথাকথিত রাসলীলা দেখে বর্তমানকালের অনেকেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে ; না বুঝেই নেতিবাচক চিন্তা এবং মন্তব্য করে ফেলে। শ্রীমদ্ভগবতে বর্ণনা করা আছে রাসলীলার বক্তা শুকদেব গোস্বামী এবং শ্রোতা পরীক্ষিত মহারাজ সহ ষাটহাজার তেজস্বী মুনী। এই সর্বমুক্ত শ্রোতাদের সামনেই বর্ণিত হয়েছে শ্রীমদ্ভাগবতের রাসলীলা। তারা সবাই নিজ নিজ কঠোর সাধনার মাধ্যমে উন্নত ভক্তিস্তরে উপনীত হয়েছিলেন। তারা নৈমিষারণ্যে শুকদেব গোস্বামীর মুখ থেকে সামান্য তুচ্ছ কাম বিষয়ক আলোচনা শ্রবণ করার জন্য সমবেত হননি। বুদ্ধিমান ব্যক্তিমাত্রই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে যে, শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা কামের প্রবর্তনের জন্য নয় ; জাগতিক কামকে অহৈতুকী আধ্যাত্মিক প্রেমাস্পদে রূপান্তরিত করতেই প্রবর্তিত।
Recent Posts
Lord krishna and yashoda
The relationship between Lord Krishna and Yashoda Mata (Mother Yashoda) is one of deep love, affection, and divine bond, often depicted as the most endearing and nurturing aspect of Krishna’s childhood. Yashoda, the foster mother of Krishna, played a vital role in his early years, caring for him as her own child.
Gouranga prabhu
Lord Chaitanya (Gouranga) was a 15th-century saint and the founder of the Gaudiya Vaishnavism tradition. His teachings revolve around the chanting of the holy names of Krishna, especially the mantra “Hare Krishna, Hare Krishna, Krishna Krishna, Hare Hare / Hare Rama, Hare Rama, Rama Rama, Hare Hare,” to attain spiritual liberation.
Krishna
Lord Krishna is one of the most revered and beloved deities in Hinduism, regarded as the Supreme God (the Parabrahman) in many traditions, particularly within Vaishnavism. Krishna’s life and teachings are recorded in various ancient texts, with the most significant being the Bhagavad Gita, where He serves as a divine guide and teacher to the warrior prince Arjuna on the battlefield of Kurukshetra.
Netai and Gouranga
Netai and Gouranga are names that hold deep significance in the tradition of Gaudiya Vaishnavism and are often used by followers of the International Society for Krishna Consciousness (ISKCON). These names are connected to the worship and reverence of Lord Chaitanya Mahaprabhu (who is also known as Gouranga) and his close associates.
What super souls say:-
Our Authors
Prabhupada Jagad Guru is a title often associated with A.C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada, the founder-acharya of the International Society for Krishna Consciousness (ISKCON). The term “Jagad Guru” means “World Guru,” and it refers to someone who is considered a spiritual teacher for the entire world.
Prabhupada’s teachings are based on the Gaudiya Vaishnavism tradition, which emphasizes devotion to Lord Krishna, and he is widely regarded as a spiritual leader who spread the teachings of Bhakti Yoga (the path of devotional service) globally. He was instrumental in translating and commenting on several key Vedic texts, such as the Bhagavad-gita, Srimad Bhagavatam, and the Chaitanya Charitamrita, making these works accessible to people of all backgrounds.
His followers often call him “Srila Prabhupada,” which means “the spiritual master who is the origin of all goodness.” Through his work, Prabhupada introduced millions to the practices of chanting the Hare Krishna mantra and living a life based on spiritual discipline, humility, and service to others.
Radhanath Swami is known for his leadership and contributions to ISKCON, especially in the development of ISKCON temples and communities in India and abroad. He played a key role in the establishment of the ISKCON temple in Mumbai, which has become one of the largest and most prominent centers of ISKCON in the world. His outreach and ability to connect with people from all walks of life have made him a respected figure among spiritual seekers.
He is also known for his charitable and social activities, including supporting educational projects, spiritual retreats, and food distribution programs such as the Food for Life initiative, which serves thousands of meals to the needy every day.
Playlist
Contact Us
If you want to submit your article you can contact with us. pmharekrishna108@gmail.com.
Follow Us
- Dara,Bhangar,Narayanpur,south 24 parganas,West Bengal,India
- 9800392796
- Timing: 9am -8pm